দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের জামিন আবেদনের শুনানি ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে এই সময়ের মধ্যে তাকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
এর আগে দুদকের দায়ের করা এ মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক গত ৮ নভেম্বর মীর নাছির বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। কিন্তু সেদিন বিচারিক আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আত্মসমর্পণের পরে মীর নাছির আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) দায়ের করেন। একইসঙ্গে, জামিন চেয়েও আর্জি জানান।
২০০৭ সালের ৬ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলালের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করে দুদক।
এ মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ একই বছরের ৪ জুলাই এক রায়ে মীর নাছির উদ্দিনকে আলাদা ধারায় তিন বছর ও ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। একইসঙ্গে তাকে ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে দুই বছরের দণ্ড দেন।
এছাড়া তার ছেলে মীর হেলালকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকার অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক মাসের দণ্ড দেন। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে পৃথক দু’টি আপিল করেন।
হাইকোর্ট ২০১০ সালের ১০ আগস্ট মীর নাছিরের এবং একই বছরের ২ আগস্ট মীর হেলালের সাজা বাতিল করে রায় দেন। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করে দুদক। ২০১৪ সালের ৪ জুলাই দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে দুর্নীতি মামলায় খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করেন।
একইসঙ্গে, মামলাটির আপিল আবেদন পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয়া হয়। সেই নির্দেশনা অনুসারে হাইকোর্টে ওই আপিল দু’টির পুনরায় শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর রায় দেন আদালত। রায়ে হাইকোর্ট তাদের আপিল খারিজ করে দেন। ফলে তথ্য গোপনের অভিযোগে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের তিন বছরের সাজা এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদের অভিযোগে ১০ বছরের সাজা বহাল থাকে।
এছাড়াও তার ছেলে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে সহযোগিতার (অ্যাবেটমেন্ট) জন্য তিন বছরের সাজা বহাল রাখা হয়। অর্থদণ্ডসহ বিচারিক আদালতে রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
এরপর নিয়ম অনুসারে হাইকোর্টের রায়টি বিশেষ জজ আদালত ঢাকা-২ গ্রহণ করার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে দুই আসামিকে আত্মসমর্পণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। সে আদেশ অনুসারে ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন গত ২৭ অক্টোবর বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ওইদিন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন। গত ১ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত তার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।